২১. হযরত আল ইয়াসা আঃ এর পরিচয় ও বিশেষ ঘটনা

পরিচয়ঃ পবিত্র কুরআনে এই নবী সম্পর্কে সূরা আন‘আম ৮৬ ও সূরা ছোয়াদ ৪৮ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে অন্য নবীগণের নামের সাথে। সূরা আন‘আম ৮৩ হ’তে ৮৬ আয়াত পর্যন্ত ইলিয়াস ও আল-ইয়াসা‘ সহ ১৭ জন নবীর নামের শেষদিকে বলা হয়েছে- ‘ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘, ইউনুস, লূত্ব তাদের প্রত্যেককেই আমরা বিশ্বের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’ (আন‘আম ৬/৮৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,  আর তুমি বর্ণনা কর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘ ও যুল-কিফলের কথা। তারা সকলেই ছিল শ্রেষ্ঠগণের অন্তর্ভুক্ত’ (ছোয়াদ ৩৮/৪৮)।  উক্ত বর্ণনায় বুঝা যায় যে, আল-ইয়াসা‘ (আঃ) নিঃসন্দেহে একজন উঁচুদরের নবী ছিলেন। তিনি ইফরাঈম বিন ইউসুফ বিন ইয়াকূব-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর চাচাতো ভাই এবং তাঁর নায়েব বা প্রতিনিধি ছিলেন। হযরত ইলিয়াস (আঃ) সুলায়মান (আঃ) পরবর্তী পথভ্রষ্ট বনু ইস্রাঈলগণের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর পরে আল-ইয়াসা‘ নবী হন এবং তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর শরী‘আত অনুযায়ী ফিলিস্তীন অঞ্চলে জনগণকে পরিচালিত করেন ও তাওহীদের দাওয়াত অব্যাহত রাখেন। বাইবেলে তাঁর বিস্তারিত অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। সেখানে তাঁর নাম ‘ইলিশা ইবনে সাকিত’ বলে উল্লেখিত হয়েছে। নবী ইয়াসা (আ.), যিনি কৈশোরে হযরত ইলিয়াস (আ.) কর্তৃক আরোগ্য লাভ করেন এবং এরপর থেকে তিনি তাঁর শিষ্যত্ব লাভ করেন। হযরত ইয়াসা (আ.) যখন নবী হিসেবে হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর স্থলাভিষিক্ত হন, প্রচুর সংখ্যক বনী ইসরায়েলকে খোদার ইবাদতে আমন্ত্রণ জানাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বিশেষ ঘটনাঃ ইয়াসা (আ.) বনী ইসরায়েলের একজন নবী ছিলেন। তাঁর পুরো নাম হচ্ছে ইয়াসা বিন আল-আযুঝ। তিনি ছিলেন হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর ছাত্র ও স্থলাভিষিক্ত। এই দুজন মহান নবীকে নিয়ে অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে যেমন, বনী ইসরায়েলের একজন মহিলা যার “ইয়াসা বিন আখতুব” নামে একটি অসুস্থ সন্তান ছিল। তিনি হযরত ইলিয়াস (আ.)-কে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। হজরত ইলিয়াস (আ.) তাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য তার অসুস্থ সন্তান ইয়াসার জন্য দোয়া করেন এবং সে আরোগ্য লাভ করে। এই মুজিযা দেখে ইয়াসা হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর প্রতি ইমান নিয়ে আসে এবং তখন থেকে হযরতের সাথী হয়ে যায়। অনেকে বলেছেন, হযরত ইয়াসা (আ.) ও হযরত ইলিয়াস (আ.) মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তারা ছিলেন একে অপরের চাচাত ভাই। হযরত ইলিয়াস (আ.)-এর মৃত্যুর পরে তিনি মানুষদেরকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে দাওয়াত করতেন।

হযরত ইয়াসা (আ.) থেকে অনেকগুলো মুজিযার কথা বর্ণিত আছে। যেমন, হযরত ঈসা (আ.)-এর মতো পানির উপরে হাঁটা, মৃতকে জীবিত করা, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করা। পবিত্র কুরআনে সূরা আনআমে দুই বার হযরত ইয়াসার নাম এসেছে। সূরা আনআমে বলা হয়েছে যে, তিনি ছিলেন হযরত ইবরাহীমের বংশের কিন্তু তিনি বনী ইসরায়েলের নবী ছিলেন কি না এ বিষয়ে উল্লেখ হয়নি। সূরা সোয়াদে হযরত ইসমাইল (আ.) ও হযরত যুলকিফল (আ.) নবীর নামের পাশে তাঁর প্রশংসা করা হয়েছে। তাওরাতে এই নবীকে সাফাত পুত্র ইয়াসা বলা হয়েছে। হিব্রু ভাষায় ইয়াসা শব্দের অর্থ ত্রাণকর্তা এবং সাফাত শব্দের অর্থ বিচারক। তিনি অধ্যবসায়ী ও উচ্চ মাকামের অধিকারী ছিলেন। যখন হযরত ইয়াসা নিজের জন্য উত্তরাধিকারী নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, বলেন: কে পারবে এই দায়িত্বকে গ্রহণ করতে যে দিনে রোজা রাখবে এবং রাতে ইবাদতে মশগুল থাকবে। বিচার করার সময় কখনোই রাগান্বিত হবেনা। এই শর্তগুলোকে তিনি তিনবার তাঁর জাতির উদ্দেশ্যে বলেন এবং প্রত্যেকবারে এমন একজন যুবক এই শর্তগুলি মেনে নেয় যাকে লোকেরা অসহায় ও মূল্যহীন মনে করত। তৃতীয় দিন হযরত ইয়াসা তাকে নিজের উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা দেন। যেহেতু সে তার ওয়াদার পালন করে আল্লাহ তাকে যুলকিফল নামে প্রশংসা করেন। সৌদি আরবের শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চল লাঊজাম-এ একটি মাযার হযরত ইয়াসা নবীর কবর বলে প্রচারিত কিন্তু মাযারটি এখন ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া তুরস্কেও তাঁর মাযার আছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।


ইসলামিক কুইজ: লেভেল ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ৫০০ টি প্রশ্নের ইসলামিক কুইজ আয়োজন করেছি। এই কুইজে অংশগ্রহণ করে দেখে নিতে পারেন ইসলামের ব্যাপারে আপনার জ্ঞান কতটা। ইসলামিক কুইজে অংশগ্রহণ করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি আপনি দেখতে পারেন। এখানে ইসলামিক এবং সমসাময়িক বিশ্বের বিভিন্ন কিছুর ব্যাপারে অনেক ভিডিও পেয়ে থাকবেন। আশা করি ভিডিওগুলো আপনাদের ভাল লাগবে। এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top